মইন উদ্দীনঃ
১৯৬৪ সালের পূর্বে কক্সবাজারে শিকড় গাড়তে পারেনি আওয়ামী লীগ। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব মারা যাওয়ার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করা শুরু করেন। ১৯৬৪ সালে বঙ্গবন্ধু আসলেন কক্সবাজার। এখানে সভা-সমাবেশ হলো। আওয়ামী লীগের নবীন প্রবীনদের  আগ্রহ দেখে খুশি হলেন বঙ্গবন্ধু।
বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন “১০ বছরের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন হবে, এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে”।
এসময় বঙ্গবন্ধু নিজেই কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের কমিটি পুনর্গঠন করেন। যে ক’জনকে দায়িত্ব দেয়া হলো তার মধ্যে অন্যতম হলেন- এ,কে,এম মোজাম্মেল হক সাহেব।
শহরের প্রাণকেন্দ্র লালদিঘীর পাড়ে মোজাম্মেল সাহেবের পারিবারিক ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়।
এরপরই কক্সবাজারে জনগণের রাজনীতি শুরু হয়।
মূলতঃ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে সংগঠিত করতে ১৯৬৩ সালেই বঙ্গবন্ধু দায়িত্ব দিয়ে রেখেছিলেন মোজাম্মেল সাহেবকে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশমতো তিনি আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ছাত্রলীগকেও সংগঠিত করেন।
১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু জেলে থাকাকালীন শেখ হাসিনা-ওয়াজেদ মিয়া দম্পতি হানিমুনে আসেন কক্সবাজারে। কারান্তরীণ পিতা মুজিবের অভাব হাসিনা-ওয়াজেদ দম্পত্তিকে বুঝতেও দেননি মোজাম্মেল সাহেব।
একইভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইনানীতে আত্মগোপনে আসলে পিতা মুজিবের নির্দেশমতো সব গোপনীয়তা রক্ষা করায় মোজাম্মেল সাহেবের প্রতি আস্থা আরো দৃঢ় হয় বঙ্গবন্ধুর।
পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে কক্সবাজার আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক জেলায় রুপান্তরিত হলে এ,কে,এম মোজাম্মেল হক সাহেব স্বাধীন কক্সবাজারের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছর তিনি কক্সবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন।
এরপর জিয়াউর রহমান-এরশাদ দুই স্বেরাচারী শাসক মোজাম্মেল হক সাহেবকে অর্থবিত্তের লোভ দেখিয়ে তাদের দলে বেড়াতে চেয়েছিলেন। মন্ত্রীত্ব কিংবা অর্থ বিত্তের লোভকে পদধুলিত করে পিতা মুজিবের আদর্শকে বুকে ধারণ করে কখনো নীতি থেকে বিচ্যুত হননি তিনি।
জিয়াউর রহমানের নির্দেশে কক্সবাজারে মোজাম্মেল সাহেবের দূর্নীতি খুঁজতে গিয়ে কোথাও কিছু না পেয়ে রাস্তা পর্যন্ত খুঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছিলো।
এরপরেও জিয়া-এরশাদ-খালেদা দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যেকোনো আন্দোলন সংগ্রামে অবিচল ছিলেন তিনি।
নিজের উপার্জিত টাকায় সংগঠন চালাতেন মোজাম্মেল সাহেব। পরিবারের চাইতেও বেশি আপন মনে করতেন নেতাকর্মীদের। কক্সবাজার শহরের নতুন বাহার ছড়ায় ওনার বাড়ি ‘হক-শণ’ সকলের কাছে ‘৩২নং বাড়ি’ হিসেবেই পরিচিত। হক-শণে এসে কেও না খেয়ে যেতে পারতেন না৷ সবার সাথে বসে আড্ডা দিতেন মোজাম্মেল সাহেব। জীবদ্দশায় কারো কাছে মাথা নত করেননি তিনি। তিনি আদর্শের প্রতি ছিলো সবসময় অটল৷
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগকে তিনি নিজেই দেখভাল করতেন। হক-শণে নেতা নির্বাচিত হতো ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও যেকোনো বিপদআপদে সরাসরি মোজাম্মেল সাহেবের আনুগত্য পেতেন। এই জনপদে মোজাম্মেল সাহেব ছিলেন  সকলের আস্থা ও ভালোবাসায়।
২০০৫ সালের ১০মে মৃত্যু বরণ করেন কক্সবাজারের রাজনীতির এই সিংহ পুরুষ।  মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
দেশরত্ন শেখ হাসিনা সবসময় শ্রদ্ধা ও সম্মান করতেন মোজাম্মেল সাহেবকে। মৃত্যুর পর নেত্রী তাঁর প্রিয় ‘মোজাম্মেল চাচা’র স্মরণ সভায় যোগ দিতে এসেছিলেন কক্সবাজারে।
আজ ১৭তম মৃত্যু বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা ও আজীবন ভালোবাসা।
হে প্রিয় নেতা, আপনার দেখানো পথেই হাঁটছি আমরা….

তথ্যসূত্র-
১. এডভোকেট জহিরুল ইসলামের লেখা “বাংলাদেশের রাজনীতি- আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি”
২. সাবেক ছাত্রনেতা কবি মানিক বৈরাগীর লেখা “মোজাম্মেল হক: এক চাতুর্যহীন সত্য পাহাড়”।

লেখকঃ
মইন উদ্দীন
সিনিয়র সহ-সভাপতি, কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ।
সম্পাদক- রক্তাক্ত সিঁড়ি।